মহেশপুরের কপোতাক্ষ নদীর পাড়ের সড়কটি ১৮ মাসে ভাঙলো ৩ দফা সর্বশেষ সংস্কার ব্যয় হয়েছে ৩২ লাখ টাকা
ঝিনাইদহ সংবাদদাতা : ঝিনাইদহের মহেশপুরে কপোতাক্ষ নদীর ধার ঘেষে যাওয়া খালিশপুর-যাদবপুর ভায়া জিন্নানগর সড়কের মহেশপুর পৌরসভার সামনে ১০২ মিটারের ভাঙ্গন ঠেকাতে মাত্র ৩ মাস পূর্বে ব্যয় করা হয়েছে ৩২ লাখ টাকা। তবে এ সংস্কার কোন কাজে আসেনি। গত সপ্তাহের বৃষ্টিতে আবারো ধসে পড়েছে সড়কটি। এক বছর আগে প্যালাসাইটিং বসিয়ে আরেক দফা চেষ্টা করা হয়েছিল, সেটাও কোনো কাজে আসেনি। বছর যেতে না যেতেই ধস নামে সড়কটির ওই অংশে।
স্থানীয়রা বলছেন, সংস্কাকার কাজ হয় কিন্তু তার মান সঠিক থাকেনা। যেকারনে ২-৪ মাস যেতে না যেতেই ভেঙ্গে যায় গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। আর সড়ক বিভাগের দাবি দুই বছর পূর্বে নদী খননের সময় তলদেশ থেকে মাটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এখন তারা যেভাবেই চেষ্টা করুক না কেন কোন কাজে আসছে না। তবে তারা এবার শক্ত ভাবে বাঁধ দিয়ে সড়ক সংস্কার করবেন বলে আশা করছেন।
এদিকে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার ব্যস্ততম সড়ক এভাবে ভেঙ্গে পড়ে থাকায় যানবাহন চলাচলে মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে । বড় বড় গাড়িগুলো প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে উপজেলা শহরের ভিতর দিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে । আর ছোট ছোট যানবাহনগুলো ভাঙ্গনের পাশ দিয়ে ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে।
স্থানীয়রা জানান, ঝিনাইদহ জেসীমান্তবর্তী একটি উপজেলা মহেশপুর। ভারত সীমানায় উপজেলা হওয়ায় এটির গুরুত্ব অনেক। এই উপজেলার মানুষের চলাচলের জন্য প্রধান সড়ক হিসেবে কালীগঞ্জ-জীবননগর সড়কের খালিশপুর থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ এই সড়কটি। এটি খালিশপুর থেকে কপোতাক্ষ নদীর ধার ঘেষে মহেশপুর শহর পেরিয়ে দত্তনগর হয়ে জিন্নানগর পেরিয়ে যাদবপুর গেছে। এই সড়কটি, সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন। ইতিপূর্বে সড়কটি খুবই খারাপ ছিল। চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়ায় এলাকাবাসি দাবি জানিয়ে আসছিল মেরামতের। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৩৯ কোটি টাকা ব্যয় ওই সড়কটির সাড়ে ৪৮ কিলামিটার সংস্কার কাজ করা হয়। যার মধ্যে মহেশপুর শহরের কিছু রয়েছে কপোতাক্ষ নদীর ধার ঘেষে। এটা সংস্কারের পর মহেশপুর বাসি ভালো ভাবে চলাচল করে আসছিলো।
এই অবস্থায় গত ২৩ সালের শেষ দিকে সড়কটির মহেশপুর শহরের মহেশপুর পৌরসভা ভবনের পাশে কপোতাক্ষ নদীর ধারে ধস দেখা দেয়। ওই স্থানের ১০২ মিটার জায়গার পিচ-পাথর বসে যেতে শুরু করে। এরপর দেখা দেয় ভাঙ্গন। অল্পদিনের মধ্যে সড়কটির উত্তর পাস ধসে কপোতাক্ষ নদীর মধ্যে চলে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই ভাঙ্গন অবস্থায় তারা ঝুকি নিয়ে চলাচল করে আসছিলো । এরপর সড়ক বিভাগ থেকে একদফা সংস্কার করা হয়। কিন্তু সেটা বেশি দিন টেকেনি। সংস্কাকার কাজের ৮ থেকে ৯ মাস পরই আবারো ধস দেখা দেয়। এই অবস্থায় চলতি বছরের জুন মাসের দিকে দ্বিতীয় দফা সংস্কার কাজ করা হয়। এবার মাত্র তিন মাস যেতে না যেতেই গত দুই সপ্তাহ হলো তৃতীয় দফা ধস নেমেছে। এবার সড়কটির অর্ধেক অংশের বেশি নদীর মধ্যে চলে গেছে। কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহ হলো বালি দিয়ে গর্ত ভরাটের চেষ্টা করছেন। সেটাও হয়নি, ইতিমধ্যে বালিও বসে গেছে। অনুমান করা হচ্ছে তলদেশ দিয়ে বালি সরে নদীতে চলে যাচ্ছে ।
ওই সড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহি বাসের চালকরা জানান, তারা যশোর থেকে কালীগঞ্জ হয়ে জিন্নানগর পর্যন্ত চলাচল করে থাকেন। এই ধসের কারনে তাদের মহেশপুর শহর ঘুরে যেতে হচ্ছে । এতে প্রায়ই শহরের মধ্যে যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে তাদের । আর এই ঘটনা মাঝে মধ্যেই হয়ে থাকে বলে জানান তারা। সর্বশেষ ৩২ লাখ টাকা খরচ করে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করা হয় । সেটাতেও এই ধস নামায় তারা বুঝে উঠতে পারছেন না কিভাব এই জায়গাটি রক্ষা করবেন।
বিষয়টি নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আহসান উল কবীর জানান, তারাও এটি নিয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন, সড়কটির ৩ বছর পূর্বে যখন সংস্কার করা হয়েছিল তখন কোনা সমস্যা দেখা দেয়নি। পরে কপোতাক্ষ নদী খননের কাজ করা হয়। তিনি আরা বলেন, সাধারণত নদ-নদী খননের সময় ভিতরের মাটি কেটে পাড় বাঁধা হয়। এখনে সেটা করা হয়নি। নদীর ভিতর থেকে কাটা মাটি সড়কের উপর রাখা হয়েছিল, সেই মাটি পরে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যে কারনে ভাঙ্গন স্থানের তলদপশের মাটি আলগা থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে । তবে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে টেকসই ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
Leave a Reply