ভ্রামমান প্রতিনিধি:  চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে আগাম সবজির আবাদ করে বাজারে সবজির চাহিদা পূরণ করে চলেছেন এক পা হারানো কৃষক মো.জামাল উদ্দিন।
৫ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি হারিয়েছেন ডান পা। তবে জামাল হারাননি মনোবল। অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে নেমে পড়েন সবজি চাষে।
বোয়ালখালী উপজেলার আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়নের হযরত বু-আলী কালন্দর শাহ্ (রহ.) মাজার গেইট এলাকার বাসিন্দা জামাল।
নিজের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করেই চলছে জামালের সংসার ও তার দুই সন্তানের পড়ালেখা।
আগাম সবজি চাষ করায় ভালো আয় বলে জানিয়েছেন জামাল। বাড়ির পাশে নিজস্ব ১৮ শতক জমিতে গত জুন মাসে করেছেন বেগুনের আবাদ। এতে খরচ পড়ে প্রায় ৩২ হাজার টাকা।
দুই সপ্তাহ ধরে ফলন আসা শুরু হয়েছে বেগুন ক্ষেতে। তিনি সপ্তাহে দুইদিন বেগুন সংগ্রহ করেন বিক্রির জন্য। পাইকারি ১০০টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা বেগুন।
জামাল বলেন, ক্ষেতে বেগুন আসতে শুরু করেছে। এখন বিক্রয় উপযোগী বেগুন ২০-২৫ কেজি পর্যন্ত সংগ্রহ করা যাচ্ছে। এটি ক্রমান্বয়ে বাড়বে। আগামী ৪ মাস পর্যন্ত এ ক্ষেত থেকে বেগুন সংগ্রহ করা যাবে। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছি।
বর্ষা মৌসুমে আগাম সবজি উৎপাদনে ভালোই লাভ হয় জানিয়ে জামাল বলেন, এসময় জমিতে পানি থাকায় সবজির আবাদ করা যায় না। ফলে বাজারে সবজি সরবরাহ কম থাকে। উঁচু জমিতে যদি আগাম সবজি চাষ করা যায় তাহলে এ সংকট থাকবে না। পাশাপাশি কৃষকরাও লাভবান হবেন।
কৃষক জামাল জানান, উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় জমিতে পানি জমে থাকে না। ফলে সবজি চাষের অবাদ সুযোগ রয়েছে। এ ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি বাজারে সবজির সংকট থাকবে না।
গত শনিবার জামালের আবাদকৃত  ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, বাড়ির পাশে তিনি বেগুন ছাড়াও করেছেন আগাম উন্নত জাতের লাউ, শিম, ফুলকপি, টমেটো ও ফরাস শিমের আবাদ। আর কয়েকদিন পর এসব ক্ষেতে ফলন আসা শুরু হবে। তবে ইতিমধ্যে লাউ বিক্রি করছেন বলে জানান জামাল।
পড়ালেখার পাশাপাশি জামালকে সহযোগিতা করে তার ৭ম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে মো.জাহিদ। জাহিদ সারোয়াতলী পূর্ণ চন্দ্র সেন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। স্কুল ছুটির পর সে ক্ষেতে ঔষধ ছিটানো, ফসল সংগ্রহসহ সেচ কাজে জামালকে সহযোগিতা করে।
জাহিদ বলেন, বাবার সাথে ক্ষেতে কাজ করতে ভালো লাগে। ছোটাছুটির কাজ করতে বাবার সময় লাগে আর স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে বাবার উঠা বসায় সমস্যা হয়। তাই সহযোগিতা করি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বোয়ালখালতে শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যে উঁচু জমিতে সবজির  আবাদ শুরু হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো আতিক উল্লাহ বলেন, করলডেঙ্গা এলাকার মো: জামাল উদ্দিন  একজন দক্ষ ও সফল কৃষক। তার সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই আগাম সবজি আবাদ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন জামাল উদ্দিনকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে সার-বীজসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কীটনাশক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে বিষমুক্ত স্বাস্থ্যবান্ধব সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা কৃষি অফিস কাজ করে যাচ্ছে।’উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করলে একদিকে অর্থনৈতিক সফলতা, অপরদিকে কৃষিতে নীরব বিপ্লব ঘটবে।