গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক  শিক্ষা অফিসারকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ !

গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক  শিক্ষা অফিসারকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ !

গাংনী প্রতিনিধি: আদালত কর্তৃক প্রেরিত মামলার তদন্তে শুনানীকালে গাংনী উপজলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক কে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার দুপুর ১২টার সময় গাংনী উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে অবস্থিত  উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা  অফিসে এই ঘটনা ঘটে। এঘটনায় র্যাব,পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে লাঞ্ছিতের বিষয়টি ছিল গাংনীর  আলোচিত ঘটনা। র্যাব,পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে আসলে গাংনী উপজেলা পরিষদ চত্বর থমথমে অবস্থা বিরাজ করে।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে ,গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক  শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক জানান, দাপ্তরিক কার্যক্রম ছাড়াও বিভিন দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে আদালতে দায়েরকৃত মামলার অধিকতর অনুসন্ধান, প্রতিবেদন ও সুষ্ঠু সমাধান করার লক্ষ্য সালিস মিমাংসা করতে আদালতের পক্ষ থেকে আদেশ প্রদান করা হয়। সেই লক্ষ্য উপজলা পরিষদের প্রায় সকল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।  জানা গেছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল , মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ (বিচারক) মো. তহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত  পিটিশন নং-১০৮/২০২৪  মামলার নিস্পত্তি করত আদেশ দেয়া হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ,২০০০ এর ২৭ (১ক)(ক)ধারা অনুযায়ী এই আদেশ ৭ কর্মদিবসের মধ্যে একটি লিখিত অনুসন্ধান প্রতিবেদন এবং উক্ত প্রতিবদনের  সমর্থন সাক্ষীদর সাক্ষ্য গ্রহনের কাগজ পত্র সহ প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রমান দাখিলের নির্দশনা দেয়া হয়।
পারিবারিক আদালত সালিস মিমাংসা করতে সে মােতাবেক  সোমবার  বাদী ও বিবাদীদর শুনানীত আহবান করা হয়।  উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক  যথারীতি মামলার বাদী  সীমা খাতুন ও বিবাদী তুহিন আলীকে নিয়ে উভয়পক্ষের স্বাক্ষীদের নিয়ে শুনানী করছিলেন। এমতাবস্থায় একদল দুর্বত্ত  শিক্ষা অফিসে এসে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি শুরু করে এবং  বিবাদীপক্ষের লাকজনের উপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে তাদেরকে কিল ঘুষি মারতে থাকে। বাইরে হট্টগাল ও গালিগালাজ  শুনতে পেয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হােসনে মোবারক অফিসের গেটের সামনে  আসেন।  একদল উছৃংখল দুর্বৃত্ত শিক্ষা অফিসারের উপর চড়াও হয় এবং তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেস্টা করে।  এসময় শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারককে নানাভাবে অশ্রাব্যভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে দুর্বৃত্তরা। একপর্যায়ে তার শার্টের কলার ধরে টানাহেচড়া করে লাঞ্ছিত করে।
খবর পেয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা তাড়াতাড়ি শিক্ষা অফিসে যান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। পরবর্তীতে ঘটনার বিবরণ জানতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মােবারকর অফিস কক্ষে  আলাচনায় বসেন।  এসময় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক  ঘটনার বর্ণনা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, আমি একজন কর্মকর্তা,আমার অফিসে বসে দাপ্তরিক কাজর পাশাপাশি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার শুনানী করছিলাম। এসময় ১৫/২০ জন যুবক  আমাকে শার্টের কলার ধরে টানা হেচড়া করে,আমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেবার চেস্টা করে। তিনি আরও বলেন, বহিরাগত দুবর্ত্তরা  আমাদের অপমান করে, লাঞ্ছিত করে, তাহলে আমি বা আমরা কিভাবে কাজ করবাে। এসময় একাধিক কর্মকর্তারাও বলেন, আমরা এমন পরিস্থিতি হলে আদালতের প্ররিত কােন সালিস ,তথ্য প্রমান,অনুসন্ধান রিপাের্ট দিতে পারবাে না।  তবে সিসি টিভির ক্যামেরায় ত্রুটি থাকায় ঘটমার সাথে জড়িতদের সনাত্ব করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা বলেন,বিষয়টি জানতে পেরে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করি।  পরবর্তীতে  ঘটনার সাথে জড়িতদের  বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কঠাের ভুমিকা রাখেন জেলা প্রশাসক স্যার। তিনি আরও  বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুর্বত্তদের সনাক্ত করা হচ্ছে।  তাৎক্ষনিকভাব গাংনী থানার ওসি বানী ইসরাইল,মেহেরপুরে দায়িত্ব প্রাপ্ত  সেনাবাহিনীদল, র‌্যাব-১২ এর ক্যাম্প ইনচার্জ আশরাফুল্লাহক বিষয়টি অবহিত করা হয়। ঘটনায় জড়িতদের দ্রত আটক এবং আইনগত ব্যনস্থা নিতে  প্রশাসনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন বলেও উপস্থিত  সাংবাদিকদর জানিয়েছেন।
উল্লখ্য,  গাংনী উপজেলার হাড়িয়াদহ গ্রামের  সােহরাব আলীর মেয়ে সীমা খাতুনের সাথে একই উপজলার ঝােরপাড়া গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে তুহিন আলীর প্রেমর সম্পর্ক নিয়ে ১ বছর আগে নিকাহ রজিষ্টারের কার্যালয়ে বিয়ে হয়।  পরবর্তীত পারিবারিক ভাবে ভুল বুঝাবুঝি হলে ছেলে তুহিন আলী বিয়ের বিষয়টি  অস্বীকার করে।  স্ত্রী সীমার সাথে যােগাযােগ বন্ধ করে দেয়।  এনিয়ে সীমা খাতুন আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।  মামলা দ্রত নিষ্পত্তি করতে ইতােপূর্বে গাংনী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নির্দশনা দেয়া হয়েছিল। মামলা নিষ্পত্তি করতে তিনি স্বামী তুহিনের ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু স্ত্রী বাদি  সীমা খাতুন নারাজি দিয়ে আদালত অবমাননা করে চলে যায়। পরবর্তীত উক্ত মামলা পুনঃ প্রতিবেদন করে নিস্পত্তি করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সই আলােকে তিনি উভয়পক্ষর শুনানী করছিলেন।