সরকারের কৃষি প্রনোদনা কৃষকে না দিয়ে আত্নসাত করেছেন কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন!

মিয়াদুল ইসলাম: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা  কৃষি অফিসার ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে রাসায়নিক সার, পারিবারিক পুষ্টি বাগানের অর্থ, কৃষি খামার যন্ত্রপাতি (মেশিনারীজ) বিক্রয়, বিভিন্ন কৃষি প্রনোদনা সহ প্রদর্শনী প্লটের কেলেংকারী ও নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কৃষি কর্মকর্তার দূর্নীতি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জানিয়েছেন সাধারন কৃষক সহ সচেতন মহল।
প্রথমবারের মত উপজেলা কৃষি অফিসার হিসেবে পদায়ন পেয়েই বড় বেপোরয়া হয়েছে উঠেছেন তিনি। কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন ২৩ সালের শুরুতে গাংনীতে যোগদানের পর থেকে সহজ সরল কৃষকদের  জিম্মি করে দূর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদারের ম্যানেজ করার কারনে তার দূর্নীতির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থায় নেন না।
সার নীতিমালা ২০০৯ লঙ্ঘন করে লাইসেন্স ও কর্তৃত্বপত্র বিহীন যত্রতত্র খোলা বাজারে নিম্নমানের সার ও কিটনাশক বিক্রিতে সহায়তা করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক বলেন, ২০২৩/২৪ অর্থ বছরের ধানখোলা, কাজিপুর রাইপুরসহ অন্যন্য প্রনোদনার বিভিন্ন সার বীজ না দিয়ে ভুয়া তালিকা তৈরি কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। চাষীরা জানান,প্রায় প্রতিটা ডিলার নামমাত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে ছোট একটি গোডাউন ভাড়ায় দেখালেও ব্যবসা পরিচালনা করেন গাংনী কিংবা বামন্দী বাজারে।
ছামিদুল ইসলাম নামের একব্যক্তি বলেন, ষোলটাকা ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার শহিদুল ইসলাম গাংনী হাসপাতাল বাজারে ব্যবসা করে থাকে ইউনিয়নে তার কোন সারের ব্যবসা নেই।  এক কেজি বাংলাদেশ টিএসপিতে সরকার ভর্তূকি দেয় কমপক্ষে ১০০ টাকা যা বাংলাদেশের জনগনের দেওয়া  ট্যাক্সের টাকা। কিন্তু একজন বা দুজন দূর্নীতি গ্রস্থ কর্মকর্তার জন্য গাংনী উপজেলাতে বরাদ্দকৃত বাংলাদেশ টি এস পির ৯০ শতাংশ জেলার বাইরে বিক্রয় করতে সক্ষম হয় সংশ্লিষ্ট ডিলার গন। বাকি ১০ শতাংশ গাংনীতে আসলেও তা বিক্রয় করা হয় ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকা করে যার কোন ভাউচার দেওয়া হয়না।
বানিয়াপুকুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আকবর জানান, ইউনিয়নে কোন সার ডিলার না থাকায় ১০ কেজি সারের প্রয়োজন হলেও বাজারে সার কিনতে যেতে হয়। গাড়ী ভাড়া বাবদ অনেক টাকা লেগে যায় এবং শহিদুল ইসলামের দোকান দিনের বেশি সময় বন্ধ থাকে। এছাড়াও খোজ নিয়ে জানা যায় শহিদুল ইসলামের নিজের অধিনে ৪ টি সারের লাইসেন্স বিদ্যমান থাকলেও সেই সকল লাইসেন্স এর নামে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (বিক্রয় কেন্দ্র) নেই।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে তিনি একটি লাইসেন্সে ২০২৩ সালে জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মোট বরাদ্দ পেয়েছেন ইউরিয়া ১২৩৬ মেঃটঃ টিএসপি বাংলা (বিসিআইসি) ৮৪.২০ মেঃটঃ, তিউনেশিয়া ও মরক্কো টিএসপি পেয়েছেন ১৩৫.০৫ মেঃটঃ, বাংলা ডিএপি ৯০.২০ মেঃটঃ, চায়না সহ অন্যন্য ডিএপি ২৬৯.৩৫ মেঃটঃ এম ও পি ৭১.৮৫ মেঃটঃ। এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারী থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ইউরিয়া ৯৯০মেঃটঃ টিএসপি বাংলা (বিসিআইসি) ৫৮.৯০ মেঃটঃ, তিউনেশিয়া ও মরক্কো টিএসপি পেয়েছেন ৯০.১৫ মেঃটঃ, বাংলা ডিএপি ২৬.৩৫ মেঃটঃ, চায়না সহ অন্যন্য ডিএপি ৫৯.৪০ মেঃটঃ এম ও পি ১০৪.৮০ মেঃটঃ।
এই সকল বরাদ্দ কৃত সার গাংনীতে না এনে বাহিরে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার সকল সার বাইরে বিক্রয় করতে সহযোগিতা করেছেন কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন ও ডিডি বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলে অভি্যোগ করেছেন কৃষকেরা ।  এ বিষয়ে একাধিক ডিডি বিজয় কৃষ্ণ হালদারের কাছে একাধিক বার অভিযোগ করেও কোন সুরহা পায়নি কৃষকেরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  একজন বিসিআইসি সার ডিলার জানান, ডিডি বিজয় কৃষ্ণ হালদার ডিলারদের কাছ থেকে মাসিক মাসুয়ারা নিয়ে থাকেন।
এছাড়াও সাব ডিলাররা একাধিকবার সার না পাওয়ার অভিযোগ করলেও কোন সুবিধা পায়নি। ভুক্তভূগি কৃষকেরা জানান, কৃত্রিম রাসায়নিক সার সংকটের মুখে বেশি দামে সার বিক্রয় করে থাকেন। প্রতি বস্তা বাংলা টিএসপি ১৩৫০ এর পরিবর্তে ২০০০ টাকায় বিক্রয় করে থাকেন।
অনাবাদি পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় গাংনী উপজেলাতে মোট বরাদ্দ মোট কতটি বরাদ্দ দিয়ছেন তার কোন সঠিক জবাব দেয়না। এর আওতায় থাকা কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানতে পারি তারা একটি নেট ও এক হাজার পঞ্চাশ টাকা দিয়েছে । সরকারী বরাদ্দ ছিল প্রায় ৩৭৫০ টাকা। বাকী টাকা কোথায় গেল জনমনে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু কোথায় গিয়ে কোন সদ্যুত্তর মিলছে না।
কৃষিকে সহজ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার গাংনী উপজেলাতে একাধিক কৃষি যন্ত্র ভর্তূকি মূল্যে বিতরন করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল কম্বাইন্ড হারভেস্টার। ইমরানকে ম্যানেজ করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরকারী মূল্যে তুলে বাইরে বিক্রয় করে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আছে যে তারা শো-রুম থেকে না তুলে তাদের কিছু টাকা দিয়ে সেখানেই মাল বিক্রয় করে থাকে এতে করে কৃষক সহজ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে।
ধানখোলা ইউনিয়নের ধান, গম, ভূট্টা অগ্রধিকার ও মাস্টার রুল তালিকা  ভূক্ত কৃষক প্রর্দশনী প্লট কাগজে কলমে থাকলেও চাষীরা পেয়েছে নাম মাত্র সার ও বীজ। তাই মাঠে তেমন একটা দেখা যায়না। সেখানে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে দেখভাল করতেও দেখা যায়না।
উপরোক্ত সকল বিষয়ের আলোকে  জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর নির্ধারিত ফরমে একাধিক বার আবেদন দিলেও কোন তথ্য মেলেনি। তিনি উত্তর লেখেন প্রযোজ্য নয়  তাই নিরুপা য় হয়ে ঐ সকল নাগরিক কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের (ডিডি) উপ-পরিচালকের কাছে আপীল আবেদন করেও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।